নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

২৪ জুলাই ২০২৫

৪৫ বছর পর এম ডব্লিউ কলেজে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৩২, ২৩ জুলাই ২০২৫

৪৫ বছর পর এম ডব্লিউ কলেজে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারি আদমজীনগর এম ডব্লিউ কলেজে ছাত্র দলের কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে। গত ১০ জুলাই রেজওয়ান মাহমুদ রাফিকে সভাপতি ও নাবিল মাহমুদ রাফিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। 

এদিকে ছাত্রদলের এ কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিখিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কলেজ অধ্যক্ষ মো: ছোলাইমান খন্দকারকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক শিক্ষার্থী।

তাঁদের অভিযোগ অধ্যক্ষ কলেজে ছাত্র দলের রাজনীতি কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন এবং তাঁর শেল্টারে ছাত্রদল কলেজের ভেতরে মতবিনিময় সহ রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করে যাচ্ছে। আমরা কলেজে ছাত্র রাজনীতির ভয়ংকর রূপ দেখতে চাই না।

দেশে কলেজ প্রশাসন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরেও পেশীশক্তির জোরে ছাত্রদল সরকারি এম ডব্লিউ কলেজে  কমিটি দিয়েছে। কলেজ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে আমরা শিক্ষার্থীরা আবারও ২৪ নিয়ে আসবো তারপরেও কলেজে কোনো প্রকার লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেব না। 

এম ডব্লিউ কলেজ থেকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা মোহাম্মদ মুজাহিদ জানান, এই সরকারি আদমজীনগর (মার্চেন্ট ওয়ার্কারস) এম ডব্লিউ কলেজে আমার জানামতে বিগত ৪৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক কোনো দলের সূচনা হয়েছে কমিটিও দেয়া হয়েছে।

আমি রাজনীতির বিরোধীতা করছি না, তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে এমন একটা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে কিভাবে রাজনৈতিক কোনো দলের কমিটি দেয়া হয় এবং সেটায় কিভাবে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের স্বাক্ষর থাকে? কলেজে অধ্যয়নরত বেশীরভাগ শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাই অধ্যক্ষ মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন, সার্বিক দিকগুলো বিবেচনা করে আমাদের এম ডব্লিউ কলেজ বিগত বছরগুলোর ন্যায় রাজনীতিমুক্ত এবং বিশৃঙ্খলামুক্ত রাখুন।
অত্র কলেজ রাজনীতিমুক্ত ছিল, সামনেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি কলেজ কর্তপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন এবং খুব শীঘ্রই জরুরী নোটিশের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের ভিতরে রাজনৈতিক দলের কমিটি প্রত্যাহার করবেন। 
এবিষয়ে কথা হলে অত্র কলেজের ২০১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী আহসানুল হাবিব সোহাগ জানান, সরকারি আদমজীনগর এম ডব্লিউ কলেজটি আমার আবেগের স্থান। এ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমি উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পার করেছি। বিগত ৪৫ বছরে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেক বার ক্ষমতায় এসেছে। কখনও এ কলেজে রাজনীতি ছিল না। অভিভাবকরাও স্বাচ্ছন্দে ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করিয়েছেন। এখন এ কলেজে রাজনীতির পরিবেশ তৈরি হলে তা ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে মনেকরি না। তাই যিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব রয়েছেন তার প্রতি অনুরোধ থাকবে তিনি যেনো এ কলেজ থেকে রাজনীতি বন্ধ করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সালমা সুলতানা বলেন, কলেজে রাজনীতি থাকলে সেখানে শিক্ষার পরিবেশ থাকে না। এমনিতেই এ কলেজের পাসের হার অনেক কম। যদি এখন রাজনীতি শুরু হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে আরও পিছিয়ে পড়বে। আমাদের অভিভাবকদেরও নানা টেনশনে থাকতে হবে সন্তানদের নিয়ে। 
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম আহবায়ক মেহরাব হোসেন প্রভাত বলেন, ‘শহীদদের ত্যাগ আমাদের অঙ্গীকারে শক্তি যোগায় এবং তাদের আদর্শ আমাদের পথপ্রদর্শক। শহীদদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা আজ একটি নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বাঁচতে পারছি। তাদের স্মৃতি আমাদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। শহীদদের রক্তভেজা এই বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অধিকার সুনিশ্চিত হবে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। 
ছাত্র রাজনীতি বন্ধের লক্ষ্যে গৃহীত নীতির অধীনে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন জানিয়ে প্রভাত আরও বলেন, ‘আমরা একটি নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি, যেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে-এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি নিরপেক্ষ, নিরাপদ এবং রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য সংগ্রাম করে আসছি। শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এম ডব্লিউ  কলেজ ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে একটি ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আমাদের অধিকার ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে, যা আমরা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। 
এদিকে এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সরকারি আদমজীনগর এম ডব্লিউ কলেজের অধ্যক্ষ মো: ছোলাইমান খন্দকারকে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালে আদমজী কদমতলী এলাকায় কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।