
প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমন সেবা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের উদ্যোগ এবং আয়াত এডুকেশনের আয়োজনে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আয়াত এডুকেশনের প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর সুমিত বণিকের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন দৈনিক ইত্তেফাক’র নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি এম এখান মিঠু।
অন্যান্যেও মাঝে উপস্থিত ছিলেন আতাউর রহমান, প্রণব কৃষ্ণ রায়, মো. মতিয়াজ আহমেদ,সাবিত আল হাসান, রিপন মাহমুদ, মো. সাইফুল ইসলাম, আফসানা আক্তার, মোবাশি^র শ্রাবণ, সাইফুল ইসলাম, জুম্মন সোহেল, রায়হান কবির নিলয়সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় নারায়ণগঞ্জের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি, সঠিক তথ্য প্রচাওে সাংবাদিকদেও সহায়তা প্রাপ্তি এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
সুমিত বণিক তার মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবেশ গঠনে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার, নীতিনির্ধারক এবং রোগীদেও সঙ্গে কথা বলে প্যালিয়েটিভকেয়ারকে মূলধারার স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্র তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
আপনাদের এ ধরনের উদ্যোগ শুধু সচেতনতা বাড়াবেনা, বরং নীতিগত পরিবর্তনের জন্য জনসম্পৃক্ততা এবং সমর্থন জোগাতেও সহায়তা করবে।
এর মাধ্যমে প্রত্যেকে মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিশ্চিত করার পথ আরও দ্রুত প্রশস্ত হবে। প্রকল্পের এই পর্যায়ে বর্হি: বিভাগ ও হোম কেয়ার সেবা নিয়েছেন মোট ৩৮৫ জন।
দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি ও সভার সভাপতি এম এ খান মিঠু নারায়ণগঞ্জে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের পরিসরকে আরও বৃদ্ধি করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘গণমাধ্যম হলো সমাজের দর্পণ, আর এই দর্পণ যতটা স্পষ্ট, ততটাই সমাজ সঠিক দিক নির্দেশনা পায়।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিয়েগ ণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ মনে করি। এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য সেবা নয় বরং মানবিক মর্যাদা, সহমর্মিতা এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিও জন্য একটি অপরিহার্য অংশ।
এই সভার মাধ্যমে এর গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন ভাবে জানার সুযোগ হলো। আমরা সাংবাদিকরা এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে একটি ইতিবাচক সামাজিক পরিবেশ গড়তে সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি। আমরা যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করি, তবে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব।’
মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের ফিল্ড অফিসার মো: হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদেও সেবা প্রক্রিয়া রোগ কেন্দ্রিক নয়, বরং রোগীকে কেন্দ্র কওে গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির মানুষকে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করছি, যাতে সেবার তথ্য সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছায়।
জীবনের শেষ সময়ে শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার রোগীর পরিবার এবং সমাজের আন্তরিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ। আর এই সেবার বার্তাকে সর্বস্তওে পৌঁছে দিতে সাংবাদিকদেও সহযোগিতার বিকল্প নেই।
এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার সারওয়ার আলম বলেন, গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সহায়ক হবে। আপনাদেও প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সঠিক তথ্য প্রচার এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর আমরা আমাদেও এই কল্যাণকর সেবা কার্যক্রমে আপনাদেরকে পাশে চাই।
সভায় বক্তারা প্যালিয়েটিভ কেয়ারের গুরুত ¡এবং এ সংক্রান্ত সেবার প্রসাওে সচেতনতা বৃদ্ধিও প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তারা উল্লেখ করেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার শুধু মাত্র রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে নয়; এটি রোগীর জীবনমান উন্নত করা এবং তাদেও পরিবারকে মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক সহায়তা প্রদান করাকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
আলোচনায় আরও বলা হয়, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে বিদ্যমান ভুল ধারণা দূও করার মাধ্যমে এটি সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি মৌলিকসেবা হিসেবে প্রতিষ্ঠাকরা সম্ভব।
এ বিষয়ে আয়াত এডুকেশন ও মমতায় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের এই নেটওয়ার্কিং সভাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বক্তারা আশা প্রকাশ করেন।
তারা আরও উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগ মানুষের জীবনের শেষ সময়ে মমতার ছোঁয়া প্রদানের বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম এবং সমাজে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের একটি টেকসই মডেল তৈরিতে সহায়ক হবে। প্রকল্পটি আরও সম্প্রসারিত হওয়া প্রয়োজন এবং দাতা সংস্থার ও পরনির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল একটি কাঠামো গড়ে তোলা হলে এর প্রভাব আরও সুদূও প্রসারী হবে।
সভায় সাংবাদিকদেও পক্ষ থেকে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রচারণায় অংশগ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
বক্তব্য উপস্থাপনের পর উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ প্রশ্ন-উত্তর সেশনে এ সংক্রান্ত নিজেদেও মতামতগুলো তুলে ধরেন। সভায় আয়াত এডুকেশনের পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি মবিলাইজার অনন্যা রহমান ও ফাহিম হোসেন।
উল্লেখ্য,‘মমতাময়নারায়ণগঞ্জ’ শীর্ষকতিন বছর মেয়াদী এই পাইলট প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার সংযুক্তিকরণ।
নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবনের প্রান্তিক সময়টুকু ভোগান্তি বিহীন, যন্ত্রণা বিহীন, বেদনা বিহীন ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে চিকিৎসা সেবার যে জ্ঞান তাই প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্যালিয়েটিভ সেবা নামে পরিচিত।মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর সহায়তায় নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিরাময় অযোগ্য রোগীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রদানের লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রকল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আয়াত এডুকেশন, ওয়ার্ল্ড হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার এলায়েন্স এবং সেন্ট ক্রিস্টোফার হসপিস (ইউকে)।