সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, গণতন্ত্রহীন সমাজে দুর্বৃত্ত শক্তিই হয় সর্বশক্তিমান। সেখানে সুশাসন থাকে না, সেখানে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন হতে পারে না। ত্বকী হত্যার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তৈরি করে রাখা অভিযোগপত্রটি আজো আদালতে পেশ করা হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিচার ব্যবস্থাকে পঙ্গু করার এইটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১৩৫ মাস উপলক্ষে শনিবার (৮ জুন) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে তিনি এসবকথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিক সমান বললেও বাস্তবতা আজকে ভিন্ন। দেশে একদিকে বেনজির-আজিজ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিরন্ন মানুষের সংখ্যা। প্রতিটি জেলায় এমনি অসংখ্য বেনজির-আজিজ গড়ে উঠেছে। আমরা এ বৈষম্যমূলক, গণবিরোধী সমাজ-ব্যবস্থার, বিচার-ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। সংবিধানে উল্লেখিত জনগণের অধিকারগুলোর বাস্তবায়ন চাই। সাগর-রুনী, তনু সহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সকল হত্যার বিচার চাই। জনবান্ধব সরকার ছাড়া কেবল স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করা যাবে না।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি ওসমান পরিবারের পাশে থাকবেন বলে ত্বকী হত্যার বিচারটা বন্ধ করে দিলেন। আপনি তাদের পাশে থাকেন আপত্তি নেই, কিন্তু আমাদরে সন্তান হত্যার বিচারটা করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এসবের বিচার করাতো আপনার দায়িত্ব।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, এই ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের মানুষের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। তারা সরকার-প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সকল অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমানের বিচার এক দিন হবেই।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. প্রদীপ ঘোষ বাবু, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্রব, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক রাশিাদ আক্তার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো আদালতে পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।