বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় জনকল্যাণ স্কুলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র রোমান মিয়া নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, তার পুত্র গোলাম মর্তুজা পাপ্পা, গাজীর সাবেক পি.এস এমদাদুল হক দাদুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব, গাজীর পি.এস মোঃ ফিরোজ ভূঁইয়া, কামরুজ্জামান হিরা, এহসানুল হক কংকন ও রূপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে নিহত রোমানের খালা রিনা (৩৫) বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় এ হত্যা মামলা দায়েল করেন। নিহত রোমান চনপাড়া এলাকার আনোয়ার মিয়ার ছেলে। চনপাড়ার নব কিশালয় হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণীল ছাত্র ছিলো।
মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান তুহিন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম ভূইয়া দুলাল, সাধারণ সম্পাদক সাকিব হোসেন খন্দকার, মুড়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহাম্মেদ আলমাছ, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জায়েদ আলী, দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ মাসুম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানজির আহম্মেদ খান রিয়াজ, শমসের আলী খান, শাহাবুদ্দিন, জয়নাল, সেলিনা আক্তার রিতা, ফাহাদ আহাম্মেদ শাওন, শহিদুল ইসলাম আগুন, রবিন, স্বপন বেপারী, জামাল, সাইজুদ্দিন, নাজমূল, সোহেল, মোঃ আলী, রাব্বি, উজ্জল, ফারুক ওরফে ফেন্সি ফারুক, কাবিলা, শাকিল, হেলাল, ফারুক প্রধান, আল আমিন, সায়েম, জামাল হোসেন কুটি ওরফে বোমা কুটি, সায়েম, সাব্বির। এছাড়াও এ মামলায় অজ্ঞাত আরো প্রায় ৫০/৬০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী রিনা উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর উৎসুক ছাত্র ও জনতা আনন্দ মিছিল করার প্রাক্কালে ঐ আনন্দ মিছিলকে পন্ড করার জন্য আওয়ামীলীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, শর্টগান, ককটেল, লাঠিসোঠা, ইটপাটকেল, রামদা ইত্যাদিতে সজ্জিত হয়ে রূপগঞ্জ থানাধীন, চনপাড়া মেইন গেইটস্থ জণকল্যান স্কুলের সামনে ককটেল বিস্ফোরন ঘটায়া এবং গুলি বর্ষন করে জনমনে আতংক তৈরী করে।
এসময় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, গোলাম দস্তগীর গাজী ও গোলাম মর্তুজা পাপ্পার নির্দেশে এবং গাজীর ৪জন পি.এস ও রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, মুড়াপাড়া, কায়েতপাড়া ও দাউদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হুকুমে আনন্দ মিছিল কারী ছাত্র ও জনতাগণকে উদ্দেশ্য করে এলোপাথারী গুলি ও আক্রমন করার নির্দেশ প্রদান করে।
এসময় আসামীরা রাস্তায় অবস্থানরত ছাত্র ও জনতার উপর ককটেল বিস্ফোরণ করে ভীতি সৃষ্টি করে এবং তাদের হাতে থাকা দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা এলোপাথারি গুলি ও মারধর আরম্ভ করে। তখন ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রোমান মিয়া চনপাড়া মেইন গেইটস্থ জণকল্যান স্কুলের সামনে গেলে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের শমশের আলীর হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে তার বুকে ও গলায় গুলি করে।
একইসময়ে শাহাবুদ্দিন নামের ২১নং এজাহার নামীয় আসামীর হাতে থাকা রিভালবার দিয়ে ঘাড়ে ও পিঠে গুলি করে। একইসাথে জয়নাল নামীয় ২২নং আসামীর হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে হাতে এবং গলায় গুলি করে এবং অন্যান্য সকল আসামীরাও এলোপাথারী গুলিবর্ষন করলে হাত, বুকে, পিঠে, ঘাড়ে, গলায় গুলি লেগে শিক্ষার্থী রোমান মিয়া (১৭) রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।
তাকে উদ্ধার করে জহোরন নেছা পূর্বগ্রাম হাসপাতালে নিয়া গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ৪ জনের পরিবার থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগা থানায় আরও ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।