নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ এপ্রিল ২০২৪

 রোজার শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৭:৩৭, ১২ মার্চ ২০২৪

 রোজার শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

প্রতি বছর রোজা এলেই নিত্যপণ্যের দামে আগুন লেগে যায়। এটা যেন বৈধ করে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবারের রোজাতেও এর কোনো ব্যতিক্রম নেই। রমজানের আগেই নারায়ণগঞ্জে বেড়েছে সবকিছুর দাম। নিত্যপণ্যে থেকে শুরু করে দাম বেড়েছে মাংস, মুরগি, ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, খেজুর, ডাল। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে সবজির বাজারেও লেগেছে আগুন।

ইফতারিতে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শরবতে ব্যবহৃত লেবু বাজারে বিক্রি হচ্ছে হালি প্রতি সর্বনিম্ন ৫০ টাকায়। যদিও এর মান খুব একটা ভালো নয়। আর একটু বড় সাইজের ভালো মানের এলাচি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা হালি।

ইফতারিতে বেগুনি বানানোর জন্য যে লম্বা বেগুন ব্যবহার করা হয়, তার দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। সালাতের জন্য নেওয়া হয় টমেটো।  এখন টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আর কাচামরিচ ৮০ টাকা, কলরা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ কমের অজুহাত দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা।

সারাদিন রোজা শেষে ইফতারের সময় মানুষ নিতে চান ছোলা স্বাদ। এটা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। রমজানের সময় দোকানগুলোতে ইফতারের পসরায় যেমন শোভা পায় ছোলা-বেগুনি, তেমনি প্রতিটি বাড়িতে ইফতারের আইটেমে থাকে বেগুনি, ছোলাসহ নানা মুখরোচক খাবার। 

তাই রোজার আগেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ছোলা দামও। ছোলা বিক্রি হচ্ছে তিন ভাগে। একটা পাওয়া যায় ১০০ টাকা আরেকটা ১১০ টাকা আর ভালোটা ১২০ টাকা। বেসনের দাম গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে।

অপরদিকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি। একইভাবে সোনালি মুরগি ৩৩০ ও লাল মুরগি ৩৩০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা আর গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৩০-১৪০টাকায় করে বিক্রি বিক্রি হচ্ছে। 

ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, রোজায় বাজারে মুরগির ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু সরবরাহ কম। পাশাপাশি মুরগির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের দাম বাড়তি। ফলে মুরগি বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। 

আব্দুল মালিক নামের এক ক্রেতা বলেন, খবরে দেখেছি রোজা আসলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সবকিছুর দাম কমে। আমাদের দেশে এর উল্টোটা হয়। যে যার মতো করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম ২৩০ টাকা কেজিতে কিনলাম ব্রয়লার মুরগি।

বেগুন কিনতে গিয়ে শুনি এর দামও ৭০ টাকায় ঠেকেছে, আর শসা কিনেছি ৮০টাকায়। রমজান আসলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেয় সবকিছুর দাম। ফলে চাহিদা মতো বাজার না কিনতে পারছি না। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।

অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আলু, পেঁয়াজ ও আদার দাম। বাজারে প্রতি কেজি আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় আর আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ১৬০-১৮০ টাকার মধ্যে ছিল। আর পেঁয়াজ এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আদা-পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, চীনে আদার দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম আছে পেঁয়াজেরও। তাই দামও বেশি রাখতে হচ্ছে।

এদিকে চালের দাম স্থির আছে তবে সেটা স্বস্তি দেওয়ার মতো না। পাইকারি বিক্রেতা তানভীর সিদ্দিক জানান মোটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, আটাশ ৬৫-৭০ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৫ কেজি বিক্রি হচ্ছে, স্বর্ণ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা।

এদিকে সব ধরনের মাছের দামও বেড়েছে । এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৮ শ থেকে সাড়ে ৯ শ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ৮০০ টাকা, রুই আকার ভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কাচকি মাছ সাড়ে ৪০০ টাকা, কাতল আকার ভেদে ২৫০ থেকে সাড়ে তিনশ টাকায়, প্রতি কেজি শিং মাছ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পাঙ্গাস ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, টেংরা ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকায়, সিলভার কার্প ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ক্রেতা হাকিম মিয়া বলেন, মাছের দাম যেভাবে বেড়েছে এখন আর নিয়মিত মাছ খাওয়া সম্ভব হবে না। আর রোজার সব আগেই তো সকল পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এখন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কিভাবে সংসার চালাব, সেই চিন্তায় আছি। যে মাছগুলো বাজারে রয়েছে সেগুলোর দ্বিগুণ দাম। তাই মাছ না কিনেই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।
 

সম্পর্কিত বিষয়: