নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বুধবার,

১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সোনারগাঁয়ে সন্ত্রাসী তাণ্ডব, বাড়িতে হামলা, লুটপাট : হত্যার হুমকি

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৯:০৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সোনারগাঁয়ে সন্ত্রাসী তাণ্ডব, বাড়িতে হামলা, লুটপাট : হত্যার হুমকি

সোনারগাঁ উপজেলার পশ্চিম সনমান্দী গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক পরিবারের ওপর বারবার সন্ত্রাসী হামলা, লুটপাট ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে খন্দকার নাঈম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে সোনারগাঁও পৌরসভার রাইজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ, সুজন ও নাজমা বেগমের নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ইব্রাহিম মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ও তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় খন্দকার নাঈমের স্ত্রী রুমি বেগমের পরনের জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

ঘটনার সময় খন্দকার নাঈম ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীদের কয়েকজন পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি। তবে পুলিশ চলে যাওয়ার পরও আতঙ্ক কাটেনি পরিবারের। 

নাঈম বলেন, আমি ও আমার পরিবার এখন জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমরা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারছি না। সরকারের কাছে একটাই আবেদন-আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।

পরিবারের সদস্যরা জানান, এ হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও একাধিকবার খন্দকার নাঈমকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে তাঁকে শতাধিক লোক ঘিরে দেশীয় অস্ত্র -দা, লোহার রড, চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয় এবং আহত করে একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয় । 

সে সময় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি বাড়ি ফেরেন।

খন্দকার নাঈমের স্ত্রী রুমি বেগম বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কয়েক মাস আগে আমার স্বামীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তখন তারা ব্যর্থ হয়। এবার আবার পরিকল্পিতভাবে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। একবার তো আমার স্বামীকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল।

খন্দকার নাঈম জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও তাঁর শালার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। গ্রামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ইন্ধনে তাঁকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি এর আগেও একাধিকবার তাঁদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। 

পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ক্ষতি করার নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি সিএনজি চালিয়ে সংসার চালাই। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখন গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হতে পারছি না। পরিবার নিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি,বলেন তিনি।

খন্দকার নাঈমের শাশুড়ি সাহার বানু বলেন, ঘটনার সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়ে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেওয়া হয়। তিনি জানান, লুট হওয়া টাকা তাঁর জামাইয়ের জন্য একটি সিএনজি কেনার উদ্দেশ্যে জমানো ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে এবং এ নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।

এ ঘটনায় দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং ভুক্তভোগী পরিবারের স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও বিচারের আশ্বাস দেন।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিবুল্লাহ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।