নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

সোমবার,

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মুক্তিবাহিনীর নামে সেই মেহেদীর পোস্টার, তোলপাড়

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৪৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মুক্তিবাহিনীর নামে সেই মেহেদীর পোস্টার, তোলপাড়

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্নস্থানে সাঁটানো হয়েছে শামীম ওসমানদের দোসর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মেহেদীর পোস্টার।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে সিদ্ধিরগঞ্জসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে এ পোস্টার সাঁটানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এক ভিডিওতে দেখা যায়, দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর পর নিজেরাই ভিডিও করে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিচ্ছেন। এমন একাধীক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে।

এদিকে দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির পাশাপাশি শামীম ওসমানের ছবি সাথে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মেহেদীর ছবি। পোস্টারে বড় করে লেখা ছিলো, ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ আর প্রচারে লেখা ছিলো ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর মুক্তিবাহিনী।’ 

সিদ্ধিরগঞ্জসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দেয়ালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এবং বেশিরভাগ পোস্টারগুলো সাঁটানো হয়েছে বিএনপির পোস্টারের উপর।

এদিকে মেহেদীর এ পোস্টারিংয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে সহ গোটা রাজনৈতিক অঙ্গণে। রাজনৈতিক নেতারা এ পোস্টারিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা ওসমানদের দোসর ও চিহ্নিত তেলচোর মেহেদীসহ পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল এলাকার মৃত আফিরউদ্দিন মাতবরের ছেলে আনোয়ার হোসেন মেহেদী। তিনি দীর্ঘদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আর এ পরিচয়ে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের খুব ঘনিষ্টজন হয়ে যান। এরপর থেকেই শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি তার মালিকানাধীন মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজের আড়ালে দীর্ঘ বহুবছর যাবত চোরাই তেলের ব্যবসা করে আসছেন।

বর্তমানে তিনি ওই এলাকার তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান বলে স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের জায়গা জমি আত্মসাতের সাথেও মেহেদীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধীক মামলাও রয়েছে।

পাঁচ আগস্টের পর বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন শামীম ওসমানের বিশ^স্ত সহচর এই আনোয়ার হোসেন মেহেদী। সবশেষে তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী মামলাও হয়। গত বছরের ২৪ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাফেজ মো: হোসাইন আহম্মেদ (২০) নামে এক যুবককে হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে আসামী করা হয়। এ মামলায় তিনি ৬৮নম্বর আসামী বলে নিশ্চিৎ হওয়া গেছে।

এদিকে বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী হওয়া সত্বেও কোন এক রহস্যজনক কারণে মেহেদী এলাকায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এবং এলাকায় ফিরে কৌশলে তিনি আবার বাংলাদেশ ট্যাংকলরী মালিক সমিতি গোদনাইল শাখার সভাপতি হয়ে যান। বর্তমানে তিনি বীরদর্পে এলাকায় থেকে সেই দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানাগেছে।

একজন যুবলীগের সক্রিয় নেতা এবং বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী হয়েও কিভাবে মেহেদী এতদিন প্রকাশ্যে ছিলেন এবং বাংলাদেশ ট্যাংকলরী মালিক সমিতি গোদনাইল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন, তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।

তারা বলছেন, একজন বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী হওয়া সত্বেও কেন এবং কি কারণে মেহেদীকে আইনের আওতায় আনা হলো না আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে তা জানতে চাই। তাকে যদি আগেই আইনের আওতায় আনা যেতো, তাহলে তিনি আজ এভাবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আর গডফাদার শামীম ওসমানের ছবি দিয়ে পোস্টারিং করার সাহস পেতেন না।

তারা আরও বলেন, আমরা জানিনা কিভাবে কাদের ছত্রছায়ায় একজন যুবলীগের সক্রিয় নেতা এতদিন প্রকাশ্যে ছিলেন এবং ট্যাংকলরীর দায়িত্ব পালন করেছেন? তার সেল্টারদাতাদেরও খুঁজে বের করা দরকার। তারা যদি আমাদের দলেরও কেউ হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠিন ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া উচিৎ হবে না। কেননা, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে এবং যারা ওই ষড়যন্ত্রকারিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে, তারা সবাই সমান অপরাধী।