
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মোহাম্মদ সজিবের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক এমপি একে এম শামীম ওসমানের নামসহ ৪৫ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলায় আরও একশ’ থেকে দেড়শ’ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।
৪৫ জনের মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, শামীম ওসমান ছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক ও কৃষক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মতিন প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি এবং থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের নাম রয়েছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুর আলম। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে থানায় মামলাটি রুজু করা হয়। নিহত সজিবের বাবা মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
শহীদদের সরকারি গেজেটে সজিবের নামের ক্রমিক নম্বর ৫৩৬। প্রায় এক বছর দেড় মাস পর তিনি নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালতের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা মামলাটি নথিভুক্ত করে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ওই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন।
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, সজিব নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়ার’ দোকানে চাকরি করতেন।
ঘটনার দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মিছিল করছিলেন। এতে ওই এলাকার দোকানপাট ও যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১১টার দিকে দোকান বন্ধ হলে সজিব বাসায় না গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন।
এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিকল্পনায় এবং শামীম ওসমানের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা নারায়ণগঞ্জে একাধিক গোপন বৈঠক করেন।
বৈঠকে আন্দোলন দমনে হামলার সিদ্ধান্ত হয়। পরে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালান।
গুলিতে সজিব ঘটনাস্থলেই আহত হয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল নিয়ে গেলে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের ২২ জুলাই তারিখে সজিবকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঘটনার পর শোক কাটিয়ে উঠে সালাউদ্দিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।
বাদী অভিযোগ করেন, প্রশাসনের উদাসীনতা ও রাজনৈতিক চাপের কারণে মামলা করতে দেরি হয়েছে।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা আসামিদের তালিকা :
১। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
২। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,
৩। সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান,
৪। কৃষক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আব্দুল মতিন প্রধান,
৫। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি,
৬। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল,
৭। শাহজাহান সাজু, আওয়ামী ভুমিদস্যু, (শামীম ওসমান ও শাহ নিজামের অর্থ যোগানদাতা, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী)
৮। নাজমুল আলম ফয়সাল, যুবলীগ ক্যাডার,
৯। মো: আবু সাইদ, ছাত্রলীগ ক্যাডার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
১০। এমডি মুসা সুমন, ছাত্রলীগ ক্যাডার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
১১। মো: শাহ আলম, ছাত্রলীগ ক্যাডার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
১২। সেকুরুল ইসলাম ওরফে রিপন, ছাত্রলীগ ক্যাডার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
১৩। আব্দুল মান্নান ওরফে মুন্না, সভাপতি ২নং ওয়ার্ড যুবলীগ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা।,
১৪। মো: শাহ আলম, গজারিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ,
১৫। এম এ হোসাইন রাজ, যুবলীগ ক্যাডার,
১৬। মো: মামুন মিয়া, সাবেক সভাপতি কুতুবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ,
১৭। নিশাদ, ছাত্রলীগ ক্যাডার,
১৮। হেলাল ফরাজী, যুবলীগ ক্যাডার ঢাকা মহানগর,
১৯। বাইজিদ মাহমুদ, ছাত্রলীগ ক্যাডার, ভুইঘর ফতুল্লা,
২০। সুমন ওরফে ফজলি সুমন, যুবলীগ ক্যাডার সাহেবপাড়া মিজমিজি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২১। শৈশব, যুবলীগ ক্যাডার, দক্ষিণ সানারপাড়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২২। বাপ্পি ওরফে ইয়াবা বাপ্পি, যুবলীগ ক্যাডার, সাহেব পাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২৩। মকবুল হোসেন, যুবলীগ সন্ত্রাসী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২৪। মতিন, যুবলীগ ক্যাডার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২৫। লিটন, যুবলীগ ক্যাডার, নিমাই কাশারী মৌচাক, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২৬। আবুল কাশেম ওরফে মাইক কাসেম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগ,
২৭। মো: মামুন, যুবলীগ ক্যাডার, মিজমিজি পাইনাদি ( পূর্বপাড়া কবরস্থান মসজিদের পাশে) সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
২৮। মো: ইসমাইল হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ,
২৯। মো: কামাল, যুবলীগ ক্যাডার, আদমজীনগর সোনামিয়া বাজার,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা।
৩০। মো: হান্নান, যুবলীগ ক্যাডার, আদমজীনগর সোনামিয়া বাজার,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা।
৩১। মো: মান্না, যুবলীগ ক্যাডার, যুবলীগ ক্যাডার, আদমজীনগর সোনামিয়া বাজার,সিদ্ধিরগঞ্জ থানা।
৩২। মো: দীন মোহাম্মদ দীনু, যুবলীগ ক্যাডার, জালকুড়ি পশ্চিমপাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
৩৩। জব্বার, আওয়ামী লীগ ক্যাডার, মুড়াপাড়া ইউনিয়ন রূপগঞ্জ থানা।
৩৪। কাজল, আওয়ামী লীগ ক্যাডার, মঙ্গলখালী উপজেলা রূপগঞ্জ থানা,
৩৫। মোহাম্মদ আলী, আওয়ামী লীগ ক্যাডার, ব্রাক্ষণগাও (দেওয়ান বাড়ি) রূপগঞ্জ থানা,
৩৬। রিয়াজ, আওয়ামী লীগ ক্যাডার, মঙ্গলখালী উপজেলা রূপগঞ্জ থানা,
৩৭। বাবু, যুবলীগ ক্যাডার, ব্রাক্ষণগাও (দেওয়ান বাড়ি) রূপগঞ্জ থানা,
৩৮। রাসেল, (সাবেক মেয়র আইভীর কর্মী) পশ্চিম দেওভোগ, সদর থানা নারায়ণগঞ্জ,
৩৯। মাখন বাবু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক,
৪০। মো: আলম, ছাত্রলীগ ক্যাডার, ভুইগর ফতুল্লা থানা,
৪১। শাহিদ, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী, মধ্যসস্তা পুর ফতুল্লা থানা,
৪২। নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী, মধ্যসস্তা পুর ফতুল্লা থানা,
৪৩। মো: রবিন, যুবলীগ ক্যাডার, গোদনাইল বাসস্ট্যান্ড রোড পদ্মা ডিপুর গেট সংলগ্ন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
৪৪। মঞ্জুর হোসেন মনজিল, আওয়ামী লীগ ক্যাডার, গোদনাইল নয়াপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা,
৪৫। মো: খোরশেদ আলম (খশু), আওয়ামী লীগের ক্যাডার, মধ্যসস্তা পুর ফতুল্লা।