নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৭ জুলাই ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতারা আড়ালে, আন্দোলনে কর্মীরা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২২:৫৬, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতারা আড়ালে, আন্দোলনে কর্মীরা

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ‘এক দফা’ দাবিতে গত ২৮ অক্টোবরের আগে রাজপথে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করলেও বর্তমানে মামলায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছে জেলা ও মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। তবে নেতাদের নির্দেশে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভাবে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করছেন মাঠ পর্যায়ে নতোকর্মীরা। যদিও অবরোধ-হরতালে এই কর্মসূচি কোন প্রভাব ফেলছে না। পুলিশী গ্রেপ্তার ও ভয়কে উপেক্ষা করে সাধারণ কর্মীরা কোনোমতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় ধীরে ধীরে এই আন্দোলন বড় পরিসরে জমাট বাধবে, এবং নেতারাও আন্দোলনে শরীক হবে,  এমনটা বলছেন মাঠের নেতাকর্মীরা।

 

এদিকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় অংশ কারাবন্দি, বিপুল সংখ্যক নেতার বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় আড়ালে, এমন এক পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও সহযোগসংগঠনগুলোর সরকার বিরোধী আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তবে একাধিক নেতার বক্তব্য হচ্ছে, গত ২৯ অক্টোবর হরতাল ও পরবর্তী বিএনপির ডাকা টানা অবরোধের সমর্থনের শুরুতে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে বিএনপি বেশকয়েকটি কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় আসলেও পরবর্তীতে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও রাজপথে জোড়ালো ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। তবে অচিরেই আন্দোলনের গতিবিধি পরিবর্তন হবে। আবারো সংঘবদ্ধভাবে বিএনপিসহ সমমনাদলগুলো নারায়ণগঞ্জের রাজপতে নামবে বলে মনে করছেন বিএনপি শীর্ষ একাধিক নেতা।

 

ওদিকে শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আড়ালে চলে গেলেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।

 

দলীয় তথ্যমতে,  হরতাল ও টানা অবরোধের সমর্থনে শুরুতে আড়াইহাজারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে হরতাল ও অবরোধ পালন করে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে হরতাল ও অবরোধ পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছিলেন। হরতাল ও অবরোধের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি নেতা আজাদকে আসামি করে পৃথক পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলা ৫০জনের বেশী নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  এরপর দমে যায়নি আজাদ। মামলা মাথায় নিয়েও বিএনপির ডাকা অবরোধ ও সদ্য ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে আড়াইহাজারে একের পর এক দলীয় কর্মসূচি পালন করেই চলেছে। 

 

আর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন তারা সবাই রয়েছেন আত্মগোপনে। বিএনপি'র টানা অবরোধ কর্মসূচি ও তফসিল ঘোষণার পর তাদেরকে রাজপথের কোথাও দেখা যায়নি। 


এছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু হরতাল ও অবরোধের শুরুতে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে দাপুটের সাথে কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু হঠাৎ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। টিপু গ্রেপ্তার হওয়ার পরে সাখাওয়াতও আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থেকেও সাখাওয়াত হোসেন খান মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করাচ্ছেন।

 

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আত্মগোপনে থেকেও হরতাল ও টানা অবরোধ এবং তফসিল প্রত্যাখ্যানের দাবিতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও মশাল মিছিল করিয়েছেন।

 

বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদও বিএনপির ডাকা টানা হরতাল ও অবরোধের সমর্থনে  ঘোষিত তফসিল বাতিলের দাবিতে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় সড়ক অবরোধ থেকে শুরু করে মশাল মিছিল করিয়েই চলেছে। এছাড়া ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মো: চৌধুরীর নির্দেশনা ফতুল্লায় বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।


দলীয় তথ্যমতে, গত ২৮ অক্টোবর আলোচিত মহাসমাবেশের পর থেকে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত নাশকতার অভিযোগ এনে ২১টি মামলা দায়ের হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে ২০টি মামলার বাদী পুলিশ। শুধু রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে একটি মামলার বাদী ছাত্রলীগের এক কর্মী। এই সকল মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৮৮০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে কয়েকশত জনকে। এখন  পর্যন্ত এই সকল মামলায় প্রায় চারশত মত গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


দলীয় সূত্র জানায়-দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন । আর নির্বাচনের এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেই চলেছে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এখন দেখার বিষয় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন গুলো রাজপথে কেমন ভূমিকা রাখতে পারে। 


এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, সরকার জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে অনৈতিকভাবে তফসিল ঘোষণা করেছে। এতে বুঝা যায় তারা আবারও একটি পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়।  


তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের নেতা জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো। বিএনপি'র চলমান আন্দোলন আরও বেগবান হবে। আমাদের এক দফা দাবি এই সরকারের পদত্যাগ, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। সরকার হামলা মামলা গ্রেপ্তার করে বিরোধীদলকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। হামলা মামলা ও গ্রেফতার নির্যাতন করে আমাদেরকে রাজপথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে না। এই সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ।


বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ জানান, সরকার আবারো পাতানো নির্বাচন করার জন্য সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। আন্দোলনে সক্রীয় নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছাড়া আইনশৃংখলাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে। প্রতিরাতেই পুলিশ ও ডিবি নেতাদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। তারপরও আমাদের নির্দেশে কর্মীরা আন্দোলনে ভুমিকা রাখছে। আমরা আড়ালে থাকলেও আন্দোলনের মাঠ ছাড়িনি। আন্দোলনেরই আছি। অচিরেই আমরা আবার সংঘবদ্ধভাবে মাঠে নামবো, ইনশাআল্লাহ। এবং এক দফার দাবি পুরুন করেই বাড়ি ফিরবো।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতিতেও তারা ভোট চুরি করে দিনের ভোট রাতে দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এবার আর তাদেরকে সেই সুযোগ দেয়া যাবে না। তাই সবার আগে এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে হবে। তারপরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।


তিনি আরো বলেন, এই সরকার আবারো একটি পাতানো নির্বাচন আয়োজনের জন্য বিরোধী মত দমনে পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করছে। বিএনপিকে নেতৃত্বশূণ্য করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। কিন্তু যত নির্যাতনই করুক না কেনো, এবার আর আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে  বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা করবো। সে পর্যন্ত আমাদের লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
 

সম্পর্কিত বিষয়: